তিনপুরুষ (ছোট গল্প) Good Luck

লিখেছেন লিখেছেন মামুন ২৯ আগস্ট, ২০১৪, ০১:৫৯:০৪ রাত



Rose একজন সাদেক সাহেব।

প্রতিদিন সকালে মসজিদে যান নামাজ পড়তে। সেখান থেকে মর্ণিং ওয়াকে বের হন। রোজকার অভ্যাস। আজ বছর দশ হল সরকারি চাকুরী থেকে অবসর নিয়েছেন। এখন অফুরন্ত অবসর। কিন্তু সময় যে কাটেনা!

আজও একা একা হাঁটতে বের হয়েছেন। মসজিদটা বাজারের ঠিক মাঝে। গার্লস স্কুলের পিছনদিকে। ফজরের নামাজে যে ক’জন মুসল্লী আসেন তাদের ভিতরে কয়েকজন হলেন মৌসুমি মুসল্লী। এরা গরমের সময় ফজরের নামাজ পড়তে পারেনা। মনে হয় ঘুম থেকে উঠতে পারে না। আর শীতের রাত দীর্ঘ হওয়াতে এবং সকালে মর্ণিং ওয়াকে যাবার জন্য এরা বাধ্য হয়ে ভোরে উঠে। মর্ণিং ওয়াক এদের কাছে যতটা না স্বাস্থ্যকর, তার থেকে বেশী স্ট্যাটাস মেইনটেইনের পরিচায়ক।

যায়গায় যায়গায় পীচ উঠে খোয়া বের হয়ে আছে। বাজার থেকে মেইনরোডে গিয়ে মিশে যাওয়া এই রাস্তাটার সংস্কার হয়না অনেকদিন। ভাঙা যায়গাগুলোতে সাবধানে পা ফেলে ফেলে এগোতে হচ্ছে। এই ৬৯ বছর বয়সে এসে এখন অনেক কিছুই দেখে শুনে করতে হচ্ছে। সামনে কবির সাহেবকে দেখতে পেলেন। তিনিও সাদেক সাহেবের মতো প্রাতঃভ্রমনে বের হন। একটু পা চালিয়ে কবির সাহেবের পাশে চলে এলেন। তবে এইটুকুতে হাফিয়ে উঠলেন। কবির সাহেব পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে একবার ফিরে তাকালেন। নিঃশব্দে সালাম বিনিময় করলেন ইশারায়। হাতে তাসবিহ রয়েছে। জিকিরে ছিলেন মনে হয়।

কিছুদুর নিঃশব্দে হাঁটলেন দুজন বুড়ো খোকা। একসময় তাসবিহ পকেটে পুড়ে কবির সাহেব বললেন,

: তারপর সাদেক সাহেব? কি খবর?

: আলহামদুলিল্লাহ!

: কেমন যাচ্ছে দিনকাল?

: চলছে আর কি...

আবার কিছুক্ষণ চুপ করে হেঁটে চললেন। বলার আর কিই বা আছে। এই বয়সে এসে হেঁটে হেঁটে অনর্গল কথা বলা যায়না। তবে কোথাও বসতে পারলে এবং একবার কথা ধরিয়ে দিতে পারলে আর থামানোই তখন দায় হয়ে যায়। সাদেক সাহেবের বউ তো ওনাকে কতবার যে বকা দেয় এই বেশী কথা বলার জন্য। বউ এর কথা মনে আসতেই কেন জানি মনটা আনন্দে ভরে উঠতে লাগল। যদিও এই দুজনের ভিতর সারাদিন ঝগড়া লেগেই থাকে। কেউ দেখলে মনে করবে ওনারা একজন আর একজনকে সহ্যই করতে পারেন না। তবে আসলে সাদেক সাহেবের তার বউ এর প্রতি যে কি পরিমাণ ভালবাসা অবশিষ্ট রয়েছে, সেটা শুধু তিনি একাই জানেন।

কবির সাহেব একটু এগিয়ে ছিলেন। চলার গতি একটু স্লথ করে বললেন,

: কি চিন্তা করছেন ভাই?

: কিছু না। এমনিতেই...

: মাহফুজের সাথে কথা বার্তা হয়?

হু এবং হ্যা এর মাঝামাঝি গোছের একটা উত্তর দিয়ে সাদেক সাহেব হাঁটার গতি একটু বাড়িয়ে দিলেন। একটু দুঃখও পেলেন- রাগও হলেন কিছুটা। মাহফুজ তার বড় ছেলে। বিয়ে করে এখন হল্যান্ডে বউ-ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকে। সেই যে ৫ বছর আগে বাবা-মাকে দেশে রেখে চলে গেলো, আর আসে নাই। প্রথম দিকে ফোনে কথাবার্তা যাও একটু হতো... ইদানিং সেটা কমতে কমতে একেবারে শুন্যের কোঠায় চলে এসেছে। এলাকার সবাই এটা জানে। আর জানে বলেই ইচ্ছে করেই এই প্রসঙ্গটা সাদেক সাহেবের সামনে তোলে। যাতে করে তিনি কষ্ট পেতে পারেন।

অবাক হয়ে মাঝে মাঝে ভাবেন- মানুষ কেন অন্য একজন মানুষকে বিনা প্রয়োজনে কষ্ট দেয়? অন্য কোনো পশুর ভিতরে নেহায়েত খাবারের প্রয়োজন ছাড়া এই প্রবনতা দেখা যায়না। তবে কি মানুষ পশুর থেকেও নীচে নেমে যাচ্ছে?

হয়তবা।

এইযে কবির সাহেব মাহফুজের কথাটা তুলে তার মনটা খারাপ করে দিলেন! কি লাভ হল তার? কবির সাহেবের মেঝ মেয়ে যে নিজের ইচ্ছেয় পালিয়ে বিয়ে করেছ্‌ সেটা জিজ্ঞেস করে তিনিও তো তাকে বিব্রত করতে পারেন এখন?

বজ্রাহতের মত থমকে দাঁড়ালেন সাদেক সাহেব।

একি ভাবলেন তিনি? যে কবির সাহেবকে মনে মনে গালমন্দ করলেন তার দুর্বল যায়গার প্রসঙ্গ তোলাতে- সেই একই কাজও তো এইমাত্র তিনি নিজেও মনে মনে ভাবলেন! তাহলে অন্যদের সাথে তার পার্থক্যটা কোথায় রইলো? কবির সাহেবও দাঁড়ালেন। একটু বিরক্ত হয়েই বললেন,

: আবার কি হল?

: একটা খারাপ কথা চিন্তা করে ফেলেছি? আপনাকে নিয়ে...

: মানে? ঠিক বুঝলাম না। কি খারাপ কথা?

: তা বলা যাবে না। তবে... মাফ করে দিয়েন ভাই সাহেব। এটা চিন্তা করা ঠিক হয় নাই।

সলজ হেসে আবার হাঁটা শুরু করলেন। একটু অবাক হয়ে কবির সাহেব ও তাকে অনুসরণ করলেন।

ফিরোজা বেগম অস্থির হয়ে বারান্দায় পায়চারি করছেন। লোকটা মর্ণিং ওয়াক থেকে এখনো যে এলোনা। কখনো তো এইরকম দেরী হয়নি। আজ যে কেন হচ্ছে? বাসা,ও কেউ নেই যে খুঁজতে পাঠাবেন। নিজেরও হাঁটুতে ব্যথা। সালেহা নামের যে কাজের মেয়েটিকে ফুলটাইম রেখেছেন, সেও গতকাল ছেলের অসুস্থতার জন্য গ্রামের বাড়িতে গেছে। আর মোবাইলটা ও সাদেক সাহেব ঘরে রেখে গেছেন। এতোই ভুলোমনা...

এর আগেও একবার মেয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়ে হারিয়ে গেছিলেন। ভাগ্য ভাল মোবাইল ছিল সাথে। শেষে মেয়ে জামাই গিয়ে বাসায় নিয়ে আসে। এরপর থেকে যেখানেই যাক সাথে মোবাইল নিয়ে যেতে বলে দিয়েছেন। কিন্তু তার কথা শুনলে তো!

ফিরোজা বেগমকে আর আধা ঘন্টা চিন্তায় রেখে সাদেক সাহেব বেশ হাসিমুখে ঘরে ফিরলেন। ফিরোজা বেগম মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও চোখেমুখে রাগ দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

: কোথায় ছিলে?

: এইতো হেঁটে আসলাম।

: তাতো জানি। কিন্তু এতো দেরী করলে কেন? কবির ভাইকে ফোন করেছিলাম। তিনি বললেন আরো আধা ঘন্টা আগেই হাঁটা শেষ করেছ তোমরা?

চুপ করে রইলেন। কি বলবেন ভেবে পেলেন না। ছোট বাচ্চা যেমন মায়ের কাছ থেকে কিছু লুকাতে চেষ্টা করে কিন্তু ধরা খেয়ে যায়- সাদেক সাহেবের অবস্থাও ফিরোজা বেগমের সামনে এলে এরকমই হয়। ফিরোজা বেগম ওনার এই অসহায় অবস্থাটা বেশ উপভোগ করেন। সেটা সাদেক সাহেব জানেন না।

ফিরোজা বেগম ও কি জানেন যে সাদেক সাহেব ইচ্ছে করেই তার এই অসহায় অবস্থাটা ওনার সামনে ফুটিয়ে তোলেন। যাতে করে ফিরোজা বেগম তাকে ইচ্ছে মত গাল-মন্দ করতে পারেন। আর এই গাল-মন্দটা তিনিও বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেন।

এখন নিঃসঙ্গ এই দু’জনের উপভোগ করার আর রয়েছেই বা কি!?

কিন্তু আজ সকল সীমা অতিক্রম করে ফেললেন ফিরোজা বেগম। সাদেক সাহেব বড় ছেলে মাহফুজের সাথে মোবাইলে কথা বলতে জাফরের দোকানেই যে ছিল এতোক্ষণ, সেটা বেশ ভালোই বুঝলেন।

: তুমি আবারও ‘ওর’ সাথে কথা বলতে গিয়েছিলে?

সাদেক সাহেব কোনো জবাব দিলেন না। এতে আরো রেগে গেলেন তিনি।

: আর কত নিজেকে ছোট করবে? তোমাকে না একবার বলেছি ওকে নিজের থেকে আর ফোন করবে না... কেন করলে? যে বাবা-মায়ের সাথে সম্পর্ক রাখতে চায় না... তুমি কেন জোর করে সম্পর্ক গড়তে চাও?

রেগে ফিরোজা বেগম নিজের রুমে চলে গেলেন।

একই যায়গায় কিছুক্ষণ স্থাণুরমত দাঁড়িয়ে রইলেন সাদেক সাহেব। একটা কথারও কোনো উত্তর দিতে পারলেন না। প্রতিদিন হেঁটে আসার পর ২০ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে কুসুম গরম পানিতে গোসল করে নেন। ওনার বউ নিজে পানিটা গোসলখানায় এনে তাকে ডেকে নিয়ে যান। আজ শরীরের ঘাম অনেক আগেই শুকিয়ে গেছে। কিন্তু ফিরোজা বেগম এতোটা রেগেছে যে সব কিছু মনে হয় ভুলে গেছে।

ধীরে ধীরে নিজের স্টাডিতে চলে এলেন।

চাকুরী থাকা অবস্থায় এই চারতলা বিল্ডিঙটা বানিয়েছিলেন। দু’তলার পুরোটায় নিজেরা থাকেন। এতো বড় বাড়িতে দুজন মাত্র মানুষ। বাকী রুমগুলো অহেতুক পড়ে আছে। ইচ্ছে করলে ভাড়া দিতে পারতেন। কিন্তু ফিরোজা বেগমের ইচ্ছে না। তার মনের গোপন কোনো এক যায়গায় এখনো ছেলের ফিরে আসার সম্ভাবনাটা জাগ্রত রয়েছে। ছেলে-বউ-নাতীদের নিয়ে এই সাজানো সংসারটায় আবারও কলরব উঠবে এই আশা এখনো তিনি জিইয়ে রেখেছেন। এটা সাদেক সাহেবও ভালো করেই জানেন।

তার কোনো অভাব নেই। যে পরিমাণ টাকা ঘরভাড়া পান তা দিয়ে একটা সংসার খুব সুন্দর ভাবে হেসেখেলে কাটিয়ে দিতে পারে। এছাড়া ব্যাংকে প্রচুর টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে রাখা আছে। ছেলের কোনো দরকারই ছিল না বিদেশে পড়ে থাকার। আজও সকালে অনেকক্ষণ কথা বলেছেন ছেলের সাথে... নাতীদের সাথে। ছেলে ফোন করলেই ভালো আছেন কিনা জিজ্ঞেস না করেই টাকা-পয়সা লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করে!

হায়রে!

এই সাদেক সাহেব কি টাকার কাঙ্গাল?

তিনি তো সম্পর্কের কাঙ্গাল... ভালবাসার কাঙ্গাল!

অনেক আগের দিনে ফিরে যান। মাহফুজের স্কুল জীবনে...সবে মাত্র অফিস থেকে এসেছেন। অনেক রাত হয়ে গেছে। ছেলে বাবাকে দেখে চাইনিজ খেতে চায়। সবে মাত্র অফিসের পোশাক ছেড়েছেন। আবার ড্রেসআপ হয়ে ছেলেমেয়ে ও ফিরোজাকে নিয়ে নিজে ড্রাইভ করে চাইনিজ হোটেলে গেলেন... ভালো কলেজে চান্স পায়নি ছেলে। নিজে লাইন-ঘাট করে যেভাবেই হোক ম্যানেজ করে নিলেন। অথচ এজন্য তাকে কতটা ছোট হতে হয়েছে তা কাউকে আজও বুঝতে দেন নাই।

এই ছেলেকে নিয়ে তার তেমন কোনো আশা ছিলনা। ইচ্ছে ছিল বাবা-মাকে নিয়ে একসাথে থাকবে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন ভালো যায়গায়। সে ঢাকায় থাকে। বছরে একটা ঈদ সে বাবা-মায়ের সাথে করে। ছেলেমেয়েদের সাথে ঐটুকুই যোগাযোগ রয়ে গেছে তাদের। মেয়ের দিক থেকে...

আশেপাশের বাড়িগুলোতে যারা আছেন তাদের সবাই একসাথে থাকে- ছেলেমেয়ে নিয়ে। ছোট ছোট বাচ্চাদের দিনভর হই হুল্লোর তার ব্যালকনি থেকে কিংবা ছাদে গেলে শুনতে পান। কি একটা অভাববোধ বুকের বাম পাশটাতে মোচর দিয়ে যায়... খুব কষ্ট পান তখন।

নিজের নাতীদের কথা মনে পড়ে... যমজ ছেলে হয়েছে মাহফুজের। কিন্তু ছবিতেই যা দেখেছেন। নাতীদের জন্মের পরে একবারও আসে নাই ওরা। তবে বাবা-মাকে হল্যান্ডে আসার জন্য অনেক বলেছে... একটা জেদ আঁকড়ে ধরে আছে ফিরোজা বেগম। সে নমনীয় না হওয়াতে সাদেক সাহেবও যেতে পারছেন না।

এলাকায় তিনি অন্যতম ধনী। সবাই সমীহ করলেও এই ছেলের দিক থেকে তাকে আঘাত করে... এটা করে সবাই একধরণের বিকৃত আনন্দ লাভ করে থাকে। কথা প্রসঙ্গে ওদের নিজ নিজ ছেলে কি করেছে... এবারে ঈদে কি দিয়েছে... কোথায় কোথায় নিয়ে গেছে... মোটকথা ঘুরে ফিরে ঐ ছেলের প্রসঙ্গেই চলে আসে। এজন্য ওনারা দু’জন নিজেদেরকে বলতে গেলে একটা জেলখানায় বন্দী করে রেখেছেন। এই জেলখানাটা তার ছেলে তাদেরকে উপহার দিয়েছে।

এখন আর মনের গভীর থেকে দীর্ঘশ্বাস বের হয় না... বের হতে হতে হৃদয়টাকে এতটাই শীতল করে দিয়েছে যে, উৎস মুখটাই ফ্রীজ হয়ে গেছে। এখন আর সেখানে সহজে কোনো ভাবের উদয় হতে চায় না... কেবলই একটা বোবা কান্না...কিছুটা কষ্ট!

আজ ছেলের সাথে মোবাইলে কথা বলে আসার সময় একটা পোস্টার দেখলেন স্কুলের দেয়ালটাতে। ছবিতে এক বৃদ্ধ বাবাকে এক ছেলে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসছে। সেখানে বাবার জবানীতে লিখা আছে,

“... একটা সময় ছিল, যখন আমার ছেলেকে রোজ স্কুলে ছাড়তে যেতাম... আজ ও আমায় ছাড়তে এসেছে... তফাৎ শুধু এটাই, বিকেলে আর নিতে আসবে না...”

সাদেক সাহেব ভাবলেন তার ছেলে তাকে এরকমই একটা বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গেছে।

কিন্তু একই সাথে নিজেকে তার ছেলের যায়গায় দাড় করালেন। সাদেক সাহেব তার যৌবনকালে ফিরে গেলেন। ওনার বৃদ্ধা বাবা-মাকে গ্রামের বাড়িতে রেখে তিনিও তো শহরের বাসায় বছরের পর বছর বউ-ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাস করেছেন। খুব কম সময়ই বাবা-মাকে দেখতে গেছেন। তারাও গ্রামের বাড়ি ছেড়ে শহরের দম-বন্ধ পরিবেশে থাকতে চাননি। তিনিও তেমন জোরাজুরি করেন নি। তবে আজ কেন নিজের ছেলের এই দূরে থাকা নিয়ে আক্ষেপ?

কেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তিতে কষ্ট পাচ্ছেন?

এই কষ্টটা কি তার প্রাপ্য নয়?

মাহফুজ কি দেখে নাই, তিনি তার বাবা মারা যাবার পরে নিজের বৃদ্ধা মাকে কীভাবে দিনের পর দিন একা রেখেছেন... প্রতি মাসে টাকা পাঠিয়েছেন ঠিকই... কিন্তু তার মাও তো টাকার কাঙ্গাল ছিলেন না! সে ও তো ভালবাসার... স্নেহের ধনের একটু স্পর্শের কাঙ্গাল ছিলেন।

এই কাঙাল অবস্থায়ই তিনি মারা গেলেন। আর সাদেক সাহেব তখন অফিসের কাজে সমুদ্রের মাঝে। ফিরলেন সপ্তাহখানেক পরে। তখন তো আর যোগাযোগ ব্যবস্থা এতো উন্নত ছিল না। নিজের মাকে শেষ দেখাও তিনি দেখতে পেলেন না।

আজ নিজের স্টাডি রুমে বসে অতীত ভেবে ভেবে একজন সাদেক সাহেব বর্তমানে বসে কষ্ট পাচ্ছেন...

চোখের কোণ বেয়ে অশ্রুধারা বয়ে চলেছে...

ফিরোজা বেগম এসে তাকে এই অবস্থায় দেখে অবাক হলেন... নিজের কিছুক্ষণ আগের ব্যবহারের জন্য অনুতপ্ত হলেন মনে মনে।

ভাবলেন তার বকা দেবার জন্যই মনে হয় সাদেক সাহেব কষ্টে কাঁদছেন।

কাছে এসে তার কাঁধে হাত রাখলেন...

এক ষাটোর্ধ বৃদ্ধ তার জীবন সঙ্গিনীকে কাছে পেয়ে আরো আবেগী হয়ে উঠলেন। ফিরোজা বেগমের ছোঁয়া সাদেক সাহেবের মনের এতদিনের সুপ্ত কষ্টকে বের হয়ে আসার পথকে আরো সহজ করে দিল। তিনি তার বউ এর দিকে ফিরে বলতে থাকেন,

: আমি ভুল করেছি... বিরাট ভুল করেছি

: ঠিক হয়ে যাবে... সব ঠিক হয়ে যাবে। কিচ্ছু ভেবো না। ও না আসুক আমরাই যাবো ওর কাছে।

সাদেক সাহেব যে জিনিসটি এতোদিন চাইছিলেন সেটা এতো সহজেই হয়ে গেলো! তারপরও তিনি খুশী হতে পারলেন না। তার কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো। যে দূরত্ব তার ছেলের সাথে তৈরী হয়েছে সেটা তো তিনি ইচ্ছে করলেই যেকোনো সময় কমিয়ে আনতে পারবেন... সেই পরিস্থিতিও তৈরী হয়েছে।

কিন্তু তিনি ছেলে হিসাবে যে দূরত্ব তৈরী করে রেখেছিলেন- সেটা আজ কীভাবে কমাবেন?

কিছু কিছু দূরত্ব আছে যেটা সময় থাকতেই কমাতে হয়...

আজ বড্ড দেরী হয়ে গেছে... একজন সাদেক সাহেবের জন্য।। Good Luck

বিষয়: সাহিত্য

১০২৫ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

259320
২৯ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৫:৩৪
নিশা৩ লিখেছেন : অনেক ভাল লাগল আপনার লেখাটি। আল্লাহ পাক আমাদের সুসন্তান গড়ে তোলার তৌফিক দিন।
২৯ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৮:১৯
203178
মামুন লিখেছেন : আমীন। আপনার ভাললাগাই আমার সবার্থকতা। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।Good Luck
259332
২৯ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৬:২৬
রাইয়ান লিখেছেন : মুগ্ধ হয়ে পড়লাম লেখাটি .... একজন বিরহী পিতা ও সন্তানের ছবিটা এত সুন্দর করে ফুটিয়েছেন , যা বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা .... একজন সার্থক গল্পকারের চোখ ও হাত থেকে কোনো কিছুই এড়িয়ে যায়না , এটা বোঝা যায় আপনার লেখাটি পড়ে। অসংখ্য ধন্যবাদ।
২৯ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৮:২৩
203179
মামুন লিখেছেন : একজন পাঠক যখন লেখকের লেখার ভিতরের খুঁটিনাটি খুব গভীরভাবে অনুভব করতে পারেন,তিনিও একজন দক্ষ লেখকই হয়ে যান। আপনার মন্তব্যে আপনার দক্ষতা প্রতিভাত হয়েছে। নান্দনিক মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইলো নিরন্তর। ভালো থাকবেন।Happy Good Luck Good Luck
259337
২৯ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৬:৩৮
কাহাফ লিখেছেন : অস্হির আধুনিকতার সয়লাবে ভেসে ভেসে অন্তহীন অজানার পথে আজকের সমাজ,ইচ্ছে করলেও যেন ফেরা যাচ্ছে না। অবসান হোক সকল অস্হিরতার এই-ই চাওয়া.........। অনেক ধন্যবাদ Rose
২৯ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৮:২৫
203180
মামুন লিখেছেন : আপনার হৃদয়ের চাওয়াটুকু আল্লাহপাক কবুল করুন। অবসান হোক অতি দ্রুত। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য। শুভেচ্ছা রইলো।Happy Good Luck Good Luck
259345
২৯ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৭:০১
মাহফুজ আহমেদ লিখেছেন : ভাই গল্পটা পড়ে চোখে পানি এসে গেলো।আমারাও কি সেই পথেই এগোছি?আপনি দরদ ও আবেগ দিয়ে সুন্দর ভাবে চিত্রটি ফোটিয়ে তুলেছেন।অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে।
২৯ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৮:৩০
203182
মামুন লিখেছেন : আমিও লিখবার সময়ে হৃদয়ের কষ্টকে প্রতি মুহুর্তে অনুভব করেছি। এই নগর সভ্যতায় আমাদের অতি প্রিয় সম্পর্কগুলি কিভাবে যেন ইচ্ছা এবং অনিচ্ছাকৃত ভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে। আমরা সব দেখেও যেন দেখছি না, কিংবা দেখতে পারছি না। সিষ্টেমের বেড়াজালে বন্দী হয়ে বাবা-মা নামের অতি মধুর দুজন মানুষকে নিজের থেকে দূর করে যাপিত জীবনে সুখের অভিনয় করে চলেছি । আপনাকে ও মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।Good Luck Good Luck
259399
২৯ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১১:৩৮
আহ জীবন লিখেছেন : যৌবনকালে মানুষ সুখ দেখে, বৃদ্ধ কালে শান্তি দেখে। হা হুতাশ আর শান্তি একসাথে উপভোগ করা যায় না। কিছু কালের পার্থক্যের কারনে জীবনটাই হয়ে উঠে অন্তর জ্বালাময়ী।

তবুও আমরা অন্ধ চোখ থাকতে ও।
২৯ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:১০
203252
মামুন লিখেছেন : হা হুতাশ এবং শান্তি- এ দুটো যারা উপভোগ করতে পারছেন, তারাই কি সফলকাম? যৌবনের সুখের জন্য বৃদ্ধকালের শান্তিকে বিনষ্ট করেও কি সুখী হওয়া যায়? আসলে প্রজন্ম গ্যাপকে যতদিন আমরা মুছে ফেলতে পারব, সুখ-শান্তি একত্রে অবস্থান করতে পারবে না। আর বর্তমান এক-কেন্দ্রিক ইট-পাথরের রোবোটিক জীবন কি আমাদেরকে সেই ব্যবধানকে কমিয়ে আনার সুযোগ দিবে?
আপনার সুচিন্তিত মন্তব্যে অভিভূত হলাম।
ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।Happy Good Luck Good Luck
২৯ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০৩:৩০
203293
আহ জীবন লিখেছেন : এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই।

ব্যাখ্যা যুক্তি কিছুই দিতে পারবনা শুধুই বলছি জানিনা কেন জানি মনে হয়- বিজ্ঞানের বেগ আমার ১০০ বছরের হায়াত অর্ধেক করে ফেলতেছে। মানুষের মত বেঁছে না থেকে সিস্তেমেতিকেলি অমানুষ হয়ে বাছতেছি। বিজ্ঞান অস্ত্রটা আমাদের হাতেই সবছেয়ে ভালো ব্যাবহার হতো।
259472
২৯ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৯
মামুন লিখেছেন : হ্যা,আপনি বলতে পারেন আমাকে। আমার ফেসবুক আইডির ইনবক্সে লিখে জানাতে পারেন প্লটটি ( আমার আইডির লিংকঃ https://www.facebook.com/almamunk3 )। আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইলো।@ আহ জীবন Good Luck Good Luck
259797
৩০ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:২৯
মু. মিজানুর রহমান মিজান (এম. আর. এম.) লিখেছেন : গল্পে গল্পে ইসলাম! ভালই ধারালো হয়েছে লেখাটা। সবারই অন্তরে গেঁথে থাকবে গল্পটি।
৩১ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৮:১৮
203661
মামুন লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মিজান ভাই।
জাজাকাল্লাহু খাইর।Happy Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File